Time & Date

স্কুল কমিটি নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, ওসিসহ আহত ৩০

 


তথ্যসূত্রঃ যমুনা টিভি নিউজ


রংপুরের পীরগঞ্জের মদনখালি ইউনিয়নের খেতাবেরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ এবং পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী মারা গেছে। আহত হয়েছে ওসিসহ অন্তত ৩০ জন।

সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরের এ ঘটনায় ১৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্কুলটির কমিটি গঠন নিয়ে প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী তালুকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি কয়েক দিন আগে গোপনে অভিভাবকদের বাদ দিয়েই বিনাভোটে স্থানীয় শহিদুল ইসলাম বাবু মিয়াকে সভাপতি করে পকেট কমিটি করেছেন। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক এবং নতুন কমিটির সাথে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তারা প্রধান শিক্ষক ও কমিটিকে স্কুলে উঠতে না দেয়ার ঘোষণা দেন। বিষয়টি দফায় দফায় পুলিশকে জানানো হয়। সকাল থেকে ওসি আব্দুল আউয়ালের নেতৃত্বে স্কুলে পুলিশ মোতায়েন থাকে।

এরই মধ্যে বেলা ১ টার দিকে প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী তালুকদার ও সভাপতি ওয়ার্ড আওংয়ামী লীগের শহিদুল ইসলাম বাবুসহ কয়েকজন দু’টি মোটর সাইকেলেযোগে স্কুলে আসতে চাইলে স্কুলের ৫০/৬০ গজ দক্ষিণে মোড়ের দোকানের সামনে তাদের পথ আটকিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এ সময় প্রধান শিক্ষককে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দিয়ে তার ওপর হামলা চালায় বিক্ষুব্ধরা। মুহুর্তের মধ্যেই লাঠিশোঠা, বল্লম, দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে উভয় পক্ষের কয়েকশ’ লোক জড়ো হয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। এ সময় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী খেতাবের পাড়ার আনারুল ইসলামের পুত্র সুমন ইসলাম আকাশের (১৪) বুকে এসে একটি বল্লম লাগে। আকাশ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। সেখানে কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায় আকাশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, আকাশের মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানে উপস্থিত পুলিশের ওপর হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। এ সময় তারা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে তারা স্কুল মাঠে এসেছেন। সে কারণে প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসার সাহস পেয়েছে এবং তাদের সন্তান মারা গেছে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় সেখানে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে পুলিশের ওসি, দুইজন এসআই, একজন কনেস্টবলসহ অন্তত ৩০ জন এলাকাবাসী আহত হন।

আহতদের উদ্ধার করে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় সেখান থেকে সহকারি শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামসহ চারজনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। পরে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এ ঘটনায় নিহত আকাশের মা গোলাপী আখতার জানান, আমার নিরপরাধ ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি দিতে হবে। ঘটনার সময় পুলিশ স্কুলের গেটে থাকলেও মোড়ে ছিল না। মোড়ের মধ্যে থাকলে এই ঘটনা ঘটতো না।

সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল হক জানান, প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী সরকারি বিধিমালা লঙ্ঘন করে অভিভাবকদের বাদ দিয়ে নিজের মন মতো গোপনে একটি কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির সাথে আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক ও এলাকাবাসী কেউ একমত নই। বিষয়টি জানিয়ে আমরা পুলিশ, ইউএনওসহ সব জায়গায় লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়ে বিধি অনুযায়ী কমিটি গঠনের জন্য দাবি জানাই। এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষক মিটিং করার জন্য বৈঠক ডাকে স্কুলে। সেজন্য সোমবার সকালে আগে পুলিশ পাঁঠিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় সভাপতিসহ নিজে স্কুলে জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা করে। এতে এলাকাবাসী বাধা দেয়। এ সময় সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও তার লোকজন এবং পুলিশের হামলায় আমাদের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী মারা গেছে।

রংপুর জেলা পুলিশের এএসপি ( ডি সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান জানান, কমিটি গঠন নিয়ে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী তালুকদার ও সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল হকের মধ্যে দ্বন্দের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় স্কুল শিক্ষার্থী আকাশ মারা যায়। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ওসিসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। আমরা আনোয়ারুলসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছি।

পীরগঞ্জের ইউএনও বিরোদা রাণী রায় জানান, মাস খানেক আগে স্কুলটিতে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিল। যারা হেরে গেছে তারা এটা মানছিল না। নিয়মানুযায়ী একমাসের মধ্যে কমিটির একটা মিটিং করার কথা। সেই মিটিং করার জন্য সোমবার প্রধান শিক্ষকসহ কমিটির লোকজন যাচ্ছিল। এ সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও প্রতিপক্ষ তাদের ওপর হামলা চালায়। মূলত টার্গেট ছিল প্রধান শিক্ষক। কিন্তু লক্ষভ্রষ্ট হয়ে ওই শিক্ষার্থীর বুকে গিয়ে বল্লম লাগে এবং সে মারা যায়। সেখানে প্রধান শিক্ষক, ওসিসহ পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল বিক্ষুব্ধ লোকজন। অতিরিক্ত ফোর্স পাঠিয়ে আমরা তাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।


স্টাফ রিপোর্টার

জে.আর জিসান আলম

গাইবান্ধা নিউজ ৭১, রংপুর

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.