মসজিদ নির্মাণে গ্রামবাসীদের উদ্যোগ
আমরা মুসলিম। মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। আর নামাজ আদায়ের জন্য দরকার মসজিদ। তেমনি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের নিজপাড়া জামে মসজিদ নামে একট মসজিদ আছে। যেখানে গ্রামের অসংখ্য মানুষ নামাজ আদায় করেন। এদিকে একই গ্রাম পশ্চিম নিজপাড়া (গাবের ভিটা) থেকে এই মসজিদটি অনেক দূর হওয়ায় গাবের ভিটা বাসীরা একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এজন্য তারা সবাই মিলে প্রত্যেকে নিজে থেকে নিজেদের সাধ্যমতো অর্থ দিয়ে মসজিদ নির্মাণের জন্য সবকিছু ব্যবস্থা করেন এবং মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কিন্তু একসাথে সব অর্থের ব্যবস্থা সম্ভব না হওয়ায় আপাতত তারা একটি ওয়াক্তি মসজিদ তৈরির কাজ শুরু করে। আশা করা যায় আগামী ৪/৫ রমজানের মধ্যে ওয়াক্তি মসজিদের কাজ শেষ হবে এবং ৬/৭ রমজান থেকেই এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারবে বলে ধারণা করা হয়। তবে গত ২৩ শে মার্চ থেকে এশার নামাজ এবং তারাবীহ আদায় শুরু হয় গাবের ভিটা গ্রামের একটি বাড়ির উঠানে এবং ১ম রমজানের দিন থেকে ইফারের আয়োজন করা হয় এবং আপাতত মাগরিব, এশা ও তারারীহ নামাজ আদায় শুরু হয় এবং গ্রামের প্রত্যেকের একটি করে ইফতার করার তালিকা তৈরি করা হয়। সেই সাথে জানানো হয় অতি শীঘ্রই ওয়াক্তি মসজিদ থেকে জামে মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। আর এজন্য গ্রামের প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে এবং নিজ থেকে অর্থ এবং শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে।
মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যান্ত প্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ স্থান মসজিদ। মসজিদ আল্লাহর ঘর। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে মসজিদ মূলত আল্লাহর ঘর।’ (সুরা জিন : ১৮)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম জায়গা মসজিদ, আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা বাজার।’ (মুসলিম : ১৫৬০)। তাই মসজিদের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর হৃদয় ও আত্মার সম্পর্ক।
আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণ, মেরামত, সংস্কার এবং এতে দান-সাহায্য করা মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত আবেগ ও গৌরবের বিষয়। তাই তো পৃথিবীজুড়ে হাজারো লাখো দৃষ্টিনন্দন মসজিদ গড়ে উঠেছে মুসলিমদের স্বতঃস্ফূর্ত দানকৃত অর্থ-সম্পদে। আল্লাহ এর জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করেছেন। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মসজিদ নির্মাণ করল, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন।’ (মুসলিম : ১২১৮; শুয়াবুল ঈমান : ২৯৩৯)
মসজিদ নির্মাণ করাকে হাদিসে সদকায়ে জারিয়া, অর্থাৎ চলমান সদকা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। মসজিদ নির্মাণের জন্য দান করলে, যতদিন এই মসজিদে মানুষ ইবাদত বন্দিগী করবে ততদিন এর সওয়াব (কবরে বসেও) বান্দা পেতে থাকবেন। মসজিদ নির্মাণের পাশাপাশি মসজিদে ফ্যান দেওয়া, লাইট ব্যবস্থা করা কিংবা মসজিদের এসি ইত্যাদি ব্যবস্থা করে দিলেও এ সওয়াব পেতে থাকবে দানকারী।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একজন মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার আমলনামায় যা থেকে নেকি যোগ হবে তা হলো যদি সে শিক্ষা অর্জনের পর তা অপরকে শিক্ষা দেয় ও প্রচার করে, অথবা সৎ সন্তান রেখে যায়, অথবা ভালো বই রেখে যায়, অথবা মসজিদ নির্মাণ করে যায়, অথবা মুসাফিরের জন্য মেহমানখানা নির্মাণ করে যায, অথবা নদী খনন করে যায়।’ (ইবনে মাজা : ২৪২)
এতে বোঝা যায়, খাঁটি নিয়তে কেবল আল্লাহর জন্য মসজিদ নির্মাণ করে গেলে কবরে বসে বসে এসব আমলের সওয়াব পেতে থাকবে বান্দা। তাই সাধ্যমতো বেশি থেকে বেশি মসজিদ নির্মাণ ও সংস্কারে জান-মাল দিয়ে সহায়তা করা চাই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
স্টাফ রিপোর্টার
নিজপাড়া, সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা
কোন মন্তব্য নেই